সোমবার ২৭ অক্টোবর ২০২৫ - ০৯:১৯
ইসলামপূর্ব আরবে নারীর অবমাননা | মেয়ের জন্ম লজ্জা, অবৈধ ছেলের জন্ম গৌরবের প্রতীক

ইসলামের আগের আরব সমাজে নারীর স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার ছিল না। তারা উত্তরাধিকার পেত না, তালাকের অধিকার ছিল না, এবং স্বামীদের সংখ্যা অসীমভাবে বৃদ্ধি করা বৈধ ছিল। মেয়েদের জীবিত সমাধি দেওয়া হতো এবং মেয়ের জন্মকে কলঙ্ক মনে করা হতো। নারীর জীবন ও মর্যাদা পুরোপুরি পরিবারের এবং পুরুষদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। এমনকি অবৈধ সন্তানের জন্মও দ্বন্দ্ব ও বিরোধের কারণ হতে পারত।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: বিশিষ্ট মূর্তজ্ঞ আল্লামা তাবাতাবায়ী, বিশাল তাফসীর “আল-মিজান” এর রচয়িতা, কুরআনের সূরা বাকারার ২২৮–২৪২ আয়াতের ব্যাখ্যায় “নারীর অধিকার, মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে” বিষয়টি আলোচনা করেছেন। তা আমাদের পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো।

ষষ্ঠ অধ্যায়: আরব সমাজে নারীর পরিস্থিতি (যে পরিবেশে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল)
প্রাচীন আরবের মানুষ আরব উপদ্বীপে বসবাস করত। এটি একটি শুষ্ক, মরুভূমির মতো অঞ্চল, যেখানে জলবাহিত বা চাষের জন্য উপযুক্ত ভূমি খুব সীমিত ছিল। অধিকাংশ লোক জনজাতিগতভাবে মরুভূমির ভ্রমণকারী উপজাতি এবং সভ্যতার সঙ্গে দূরবর্তী; তাদের জীবনধারা লুটপাট, আক্রমণ ও সংঘাতের উপর নির্ভরশীল ছিল।

ভূগোলগতভাবে, আরব উত্তরপূর্বে পারস্য (ইরান), উত্তরে রোম সাম্রাজ্য, দক্ষিণে হাবশা (ইথিওপিয়া) এবং পশ্চিমে মিসর ও সুদানকে সংযুক্ত করত। এই কারণে, তাদের প্রধান রীতি ছিল প্রাথমিক বর্বরতা ও জঙ্গলে বেঁচে থাকার পদ্ধতি। তবে মাঝে মাঝে প্রাচীন রোম, পারস্য, ভারত ও মিসরের প্রভাবও দেখা যেত।

আরব সমাজে নারীর স্বাধীনতা বা মর্যাদা ছিল না। নারীর সম্মান ছিল কেবল পরিবার ও গোত্রের। তারা উত্তরাধিকার পেত না, স্বামীর সংখ্যা সীমাহীনভাবে বাড়ানো বৈধ ছিল, এবং তালাকের বিষয়ে নারীর কোনো অধিকার ছিল না। মেয়েদের জীবিত সমাধি দেওয়া হতো।

এই নিষ্ঠুর প্রথার প্রথম উদাহরণ পাওয়া যায় বনু তামিম উপজাতিতে। এই উপজাতির মানুষরা তাদের কন্যাদের জন্মের পরে হত্যা করে জীবিত সমাধি দিত।

এই ঘটনা ঘটে যখন বনু তামিম নুমান ইবন মুনজির এর সঙ্গে যুদ্ধে হেরে যায়। যুদ্ধের সময় কিছু কন্যা বন্দি হয়, এবং উপজাতির লোকজন অতিরিক্ত রাগ অনুভব করে সিদ্ধান্ত নেয়, যে তারা নিজেদের কন্যাদের হত্যা ও জীবিত সমাধি দেবে। ধীরে ধীরে এই অমানবিক রীতি আরবের অন্যান্য উপজাতিতেও প্রচলিত হয়ে ওঠে।

আরবরা মেয়ের জন্মকে কলঙ্ক মনে করত। কুরআনে এর প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে:
«يَتَوَارَىٰ مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ»
অর্থাৎ, মেয়ের জন্মের খবরে পিতা নিজেকে অন্যদের থেকে লুকাতেন। বিপরীতে, ছেলে সন্তান জন্মালে (এমনকি অবৈধ হলেও) পরিবার ও সমাজ আনন্দিত হতো।

এমনকি, বিবাহিত নারীর সঙ্গে যে ব্যক্তি অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, তার সন্তানও সমাজে স্বীকৃতি পেত। অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটত, যেখানে উপজাতির প্রভাবশালী ব্যক্তি বা নেতারা এক ছেলেকে নিজের দাবি জানাত। কখনও কেউ সন্তানকে নিজের দাবিতে যুক্ত করতে চাইত, যা উপজাতি ও সমাজে বিরোধ ও দ্বন্দ্বের সূত্র হত।

উৎস: আল-মিজান, তাফসীর, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০৩

পরবর্তী অংশে চলবে…

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha